ডেস্ক নিউজ:
নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে জনগণের আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে অংশ নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ পরামর্শ দেন। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তত ৩০ জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অনেকে। এ সময় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ইসিকে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের দৃঢ় ও স্বাধীন ভূমিকা নিয়ে মানুষের কাছে দৃশ্যমান হতে হবে। নির্বাচনী আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে এবং তাদের নিরপেক্ষ রাখতে ইসি কীভাবে ভূমিকা রাখবে তা দেখতে হবে।

ধর্মকে নির্বাচনী প্রচারে কোনোভাবেই নেয়া যাবে না। সেনাবাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে রাখতে হবে। নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রাখতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা আইন করতে হবে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ইসি কোনো ইস্যু রেইজ করেনি, তারা বলতে দিয়েছে। ইসিকে তার ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে হবে, বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। কমিশনকে সক্রিয় হতে হবে। সব দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে হবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও ভোটারের মনে যে ভয়ভীতি রয়েছে তা দূর করতে হবে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সবাই খোলামেলা মত দিয়েছেন। অনেক বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে, কিছু বিষয় নিয়ে ভিন্নমতও এসেছে। নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় হতে হবে। নিকট অতীতে দেখেছি ইসি নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগে অনীহা দেখিয়েছে, যেটা সুষ্ঠু নির্বাচন অর্জনে কাজ দেয়নি। ইসি নিজে যেন সক্রিয় হয়। তিনি বলেন, ইসির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অভিযোগ আমলে নেয়া হয় না বা প্রতীকার নেই। এটাতে সক্ষমতা প্রমাণ হয় না। এজন্য সক্ষমতা দেখানো জরুরি। অভিযোগ আমলে নিয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে অনেক অনিয়ম রোধ হতো।

সাবেক রাষ্ট্রদূত অলিউর রহমান বলেন, আলোচনায় মূল ফোকাসটা দেয়া হয়েছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে। আমরা যেন সবার অংশগ্রহণে ভোট দেখতে পাই। সহায়ক সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অনেকে বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনা হোক, আমরা বলছি এটা আনা সম্ভব নয়, এটা ডেড ইস্যু। সেনাবাহিনী নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে, আমরা বলেছি তাদের ম্যাজিস্ট্রেশিয়াল পাওয়ার দেয়া ঠিক হবে না, সেনাবাহিনীকে ভোটে আনার দরকার নেই। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার কথা তুলেছে, আমরা বলেছি ভেঙে দেয়া যাবে না।

অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ভোটের সময় সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলেই জনগণ সন্তুষ্ট থাকবে। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে।

অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন হচ্ছে সুপার পলিটিক্যাল ইভেন্ট। নির্বাচনের মাধ্যমে দলগুলো ফল ঘরে তোলে। কিন্তু এখনকার সংকট দূর করে নির্বাচনী কৌশলে আসতে হবে।

এম হাফিজ উদ্দিন খান জানান, সব দলকে ভোটে আনতে হবে এবং এজন্য সবার সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে আইনে ঘাটতি থাকলে তার ব্যবস্থা নেবেন। নাগরিক প্রতিনিধিরা সঙ্গে থাকবেন। আগামীতে ১ কোটি প্রবাসী নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সংসদকে টিকিয়ে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, সেই নির্বাচনে সংহিসতার আশঙ্কা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, এর আগেও অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক সংহিসতা হয়েছে। আরপিও পরিবর্তন করে সশস্ত্র বাহিনীকে আনতে হবে, অন্যথায় আগামী নির্বাচনে খুব সহিংসতা হবে।